সৈয়দ মামুনূর রশীদ, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন), ঘাসফুল
শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি এর গুনগত মান নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্ব বহন করে। এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং স্থানীয় পরিমণ্ডলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাব্যবস্থা, পাঠদান কর্মসূচি উপযোগী স্থান ও সিলেবাস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট চার-এ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ও বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেলেও, এর মান নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। বিশেষ করে দেশের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত এবং রক্ষা করা – দুটোই কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্য ও মানসম্মত শিক্ষকের অভাব, শিক্ষার্থীদের ঝরে পরার প্রবণতা ও অভিভাবকদের উদাসীনতা এ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঘাসফুল-এর এরকমই একটি উদ্যোগ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন- এর অর্থায়নে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার দুটি ইউনিয়নে “সমৃদ্ধি” কর্মসূচির অধীনে ঘাসফুল ৭৮টি বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্র চালু করেছে। এসব পাঠদান কেন্দ্রে কর্মরত প্রশিক্ষিত শিক্ষিকারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচশতাধিক শিশুদের শিক্ষাদান ও তাদের স্কুলের পড়া তৈরি করতে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষকে এই প্রশংসনীয় উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এসব শিক্ষিকাদের নির্বাচিত করা হয় এবং তাদের যথাযথ পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাঠদান ও শিক্ষকতায় দক্ষ ও পারদর্শী করে তোলা হয়। পাশাপাশি শিশুদের পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতে তাদেরই প্রতিবেশীদের বসার ঘর কিংবা বারান্দায় এসব বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রের স্থান নির্ধারণ করা হয়।
ঘাসফুল বিশ্বাস করে, শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করতে সারাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শিশুদের বিদ্যালয়মুখী ও তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রের মত কর্মসূচি গ্রহণ করে এক্ষেত্রে আরও ভূমিকা রাখতে পারে। এ ধরণের পাঠদান কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে গ্রাম পর্যায়েও ব্যাপক হারে মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে। যার ফলে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পরার হার কমে আসবে, তাদের মধ্যে ভালো ফলাফল অর্জনের প্রতিযোগিতা বাড়বে যা সর্বোপরি তাদের লেখাপড়ায় আরও উৎসাহী করে তুলবে। পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীরা গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
আশা করা যায়, মূলধারার উদ্যোগের পাশাপাশি বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রের মত দেশব্যাপী এ ধরণের বিকল্প কর্মসূচি বাংলাদেশে শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। একই সাথে আশা করা যায়, আসন্ন “নাগরিক সম্মেলন ২০১৭: বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়ন” টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এই অভীষ্ট অর্জনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে এ ধরণের বিকল্প কর্মসূচি নিতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি একটি যথাযথ দিকনির্দেশনা দিতে পারবে।
Its a very good idea ,its open our eyes for the better education in rural & slum area.thanks for initiative.