এসডিজি বাস্তবায়নে সকল ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে হবে

Blog > এসডিজি বাস্তবায়নে সকল ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে হবে

এসডিজি বাস্তবায়নে সকল ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে হবে

December 5, 2017 | Admin | Blog

রিফাত বিন্তে জিয়া, প্রোগ্রাম অফিসার (মিডিয়া), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট “২০৩০ এজেন্ডা” গৃহীত হয়। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে পাঁচ নং অভীষ্ট হচ্ছে জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও কন্যা-শিশুর ক্ষমতায়ন। তাই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমাদের দেশের জেন্ডার অসমতার কারণ ও ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তার দীর্ঘদিনের নারী আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দেখছে – পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মের অপব্যাখ্যা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক অধিকারে অসমতা, শিক্ষায় অণগ্রসরতা, কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে তৈরি হয় জেন্ডার অসমতা। জেন্ডার অসমতার মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত করতে গেলে দেখা যাবে নারীরা এখনো রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার ঐতিহাসিক ভাবে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সমাজে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারী ও কন্যা-শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে একসূত্রে গেঁথে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিলগ্নে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। কবি সুফিয়া কামলের নেতৃত্বে অধিকার ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গঠিত হয় আন্দোলনমুখী জাতীয়ভিত্তিক, অরাজনৈতিক এই স্বেচ্ছাসেবী গণ নারী সংগঠন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) লক্ষ্য অর্জনে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিল। সংগঠনটির ধারাবাহিক কাজের সাথে এসডিজির বেশ কিছু অভীষ্টের সম্পৃক্ততা রয়েছে, বিশেষ করে অভীষ্ট পাঁচ অর্জনে মহিলা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর। যদিও বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে সমাজে জেন্ডার অসমতার তীব্রতা বেড়েছে, আর যুক্ত হয়েছে নতুন কৌশলের মাধ্যমে ভিন্ন মাত্রা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সমাজের প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলছে, যার মূল উদ্দেশ্য নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনটি সর্বক্ষেত্রে নারী এবং কন্যা-শিশুর বিরুদ্ধে বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু পাচার, যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি শোষণ-বঞ্চনাসহ সকল ধরনের সহিংসতার অবসানের জন্য সংগঠনটি অ্যাডভোকেসি, মানববন্ধন, সমাবেশ করে সোচ্চার থাকে রাজপথে। পাশাপাশি এই সকল ইস্যুতে স্মারকলিপি ও বিবৃতি দিয়ে থাকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বাল্যবিবাহ প্রথার অবসান ঘটানো এবং বাল্য বিবাহ আইনের ‘বিশেষ বিধান’ বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল পর্যায়ে নেতৃত্ব দানের জন্য নারীদের পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর অংশগ্রহণ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহিলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে সাংবাদিক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী নারী এমনকি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের সাথে প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্কিং করে থাকে। তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে সংগঠনটি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পাঠচক্র করে থাকে, যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নারী পুরুষ সমানাধিকার মনোভাব তৈরি হয়। সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড প্রতিষ্ঠার দাবি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আজও জানিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের এই কাজগুলো সম্পূর্ণরুপে এসডিজি অভীষ্ট পাঁচ ও এর লক্ষ্যসমূহের সাথে একীভূত।

এসডিজির অভীষ্ট পাঁচ-এর টার্গেটসমূহে আমরা জেন্ডার সমতাপূর্ণ একটি রাষ্ট্র গঠনের সকল উপকরণ দেখতে পাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারবে এসডিজির লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করতে, যার মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে টিকে থাকা জেন্ডার অসমতা থেকে মুক্তি পাবে এই দেশ। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা আমাদের সকলের। সমাজে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠিত করে এসডিজির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সচেতন হতে হবে ও এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে এগিয়ে আসতে হবে নারীদের নিজেদেরও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − eight =